কত জাতি, কত ভিন্ন-ভাষী, কত ভিন্ন-ধর্মের মানুষ আজকলকাতা শহরের স্থায়ী বাসিন্দা। তাঁদের সংস্কৃতি ঋদ্ধ করেছেমহানগরকে যেমন, তেমনই তাঁরা একাত্ম হয়ে গিয়েছেন এখানকার মানুষের সঙ্গে। কবির বাণী সত্য হয়েছে ‘দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে’। রন্ধনশিল্প সর্বতোভাবেই জীবনশৈলীর অঙ্গীভূত। তাই কলকাতার রন্ধনসংস্কৃতিতে মিশেছে যেন সমগ্র ভারত, কিছু-বা বিশ্বও। আলপনা ঘোষ ‘ভোজনবিলাসে কলকাতা’ গ্রন্থে বিচিত্র সব রান্নার ইতিহাস অন্বেষণ করেছেন। আর্মেনিয়ান, বাগদাদি ইহুদি, পারসি, অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের রান্নার বৃত্তান্তের সঙ্গেই আছে ভারতের অন্যান্য সম্প্রদায়ের বিরিয়ানি, ধোকলা বা নিরামিষ পদের কথাও। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের, ঘটি-বাঙালের রন্ধনপ্রণালীর বিশ্লেষণ এই গ্রন্থের সম্পদ। রন্ধন-সংস্কৃতি বিষয়ে এমন বই বাংলা ভাষায় বিরল।
আলপনা ঘোষ-এর জন্ম ১৯৪৫, কলকাতা শহরে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। ‘কালান্তর’ পত্রিকার সাংবাদিক হিসাবে কর্মজীবনের শুরু। ১৯৭০ সালে প্রখ্যাত সাংবাদিক শংকর ঘোষের সঙ্গে বিবাহ। দীর্ঘকাল শিক্ষকতা করেছেন বালিগঞ্জের সাউথ পয়েন্ট স্কুলে। পাশাপাশি লেখালিখি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ ভাষা শিখেছেন। নয়ের দশকে পর্তুগাল সরকারের বৃত্তি নিয়ে ওই ভাষাতে উচ্চতর শিক্ষার জন্য গিয়েছিলেন ম্যাকাও। শিখেছেন জাপানি পুষ্পসজ্জা। কিয়োটোর বিখ্যাত ইকেবেনা সংস্থা ইকেনোবো থেকে পুষ্পসজ্জায় পারদর্শিতার জন্য প্রশংসাপত্র পেয়েছেন। ১৯৮৬-তে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ। দারুণ মজা পান নিজের ছোট গাড়ি চালিয়ে জ্যামজটে পূর্ণ কলকাতা শহরে ঘুরে বেড়াতে। রান্নাবান্নাতে হাতেখড়ি হয়েছিল বিয়ের পরে মা, ঠাকুমার কাছে। আজও রান্নাবান্না নিয়ে তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষার শেষ নেই।